গত বছর করোনার মধ্যেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার হিড়িক পড়েছিল। এ অভিজ্ঞতা থেকে এ নিয়ে আগাম পরিকল্পনার অবকাশ ছিল এবং সরকার তা নিয়েও ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নানা রকম কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েও ঘরমুখী মানুষের ঢল থামানো যায়নি, যাচ্ছে না। এবার আগেই লকডাউন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিল হলেও আন্তঃজেলা বাস ও পরিবহন সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল, শিমুলিয়া-পাটুরিয়া ফেরি চলাচল পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ছাড়া অন্যদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল এবং সর্বশেষ জনতার ঢল সামলাতে ঘাটে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু সত্য হলো কোনো ব্যবস্থাই বাড়িমুখী উৎসাহী জনতাকে ঠেকাতে কার্যকর হয়নি। মানুষ ঢাকা ছাড়া ও বাড়ি যাওয়া বন্ধ করেনি। তারা পরিবার ও মালপত্র নিয়েই ভেঙে ভেঙে নানা বিকল্প যানে বেশি ভাড়া গুণে ঠিকই বাড়ি যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বারবার প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থানস্থলে ঈদ পালনের যে আহ্বান জানিয়েছেন তা কাজেই আসেনি। বোঝা গেল সরকার বা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। আবার বিভিন্ন নির্দেশনার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ঈদে বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে সত্যিকারভাবে বেশি বাধা দিতে চায়নি সরকার। গতবার বাধা না মেনে গ্রামে ঈদ পালন সত্ত্বেও করোনা সেভাবে না ছড়ানোয় হয়তো সরকার এবারও তেমন ঘটবে বলেই ভাবছে। কিন্তু করোনা এক সৃষ্টিছাড়া ভাইরাসের অবদান, এর আচরণ নিয়ে আগাম কিছু বলা প্রায় অসম্ভব। তবে ভারতের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা এবং দেশে ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ায় আমাদের এখন একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। কারণ এই দ্বিগুণ শক্তির ধরনটি কী মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার দৃষ্টান্ত গত তিন সপ্তাহ ধরে ভারত বিশ্বকে দেখাচ্ছে। এর পর জনসমাবেশ এড়ানোর জন্য বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, লকডাউন নিয়ে সরকারি নির্দেশনা কখনই স্পষ্ট ও বিস্তারিত হয়নি। মানুষ তার সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো চলাচল করছে। আমাদের ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য এবং জনগণের ইচ্ছার ধরন বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, উচিত ছিল ঈদকে সামনে রেখে কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ। ঈদবাজারে ঢাকামুখী জনসমাগম হ্রাস করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিন মাস ধরে ধাপে ধাপে ঈদমেলা আয়োজন করা যেত, তাতে এক বাজারে ক্রেতার ভিড় কিছুটা কম হতো। ঈদযাত্রার জন্য বাড়তি গণপরিবহন রেখে পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রীর বিধান জারি রাখতে হতো। আর রোজার আগে থেকেই ঈদে বাড়ি যাওয়া বা চলাচল বন্ধ রাখার আবেদনটি প্রচার করতে হতো। তাতে অনেক মানুষ আগেই এ বছর বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিত তেমনটা আশা করা যায়। এখন জাতিকে গভীর আতঙ্ক ও আশঙ্কা নিয়ে ঈদ-পরবর্তী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দুরুদুরু বুকে অপেক্ষায় থাকতে হবে।
Leave a Reply